ভৌগোলিক সীমানা ঃ
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে আধার মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলার আয়তন ২,৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা, দক্ষিণে ত্রিপুরা রাজ্য (ভারত), পূর্বে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা
প্রাচীন ইতিহাস
বহুপূর্ব থেকেই মৌলভীবাজার তথা সিলেট অঞ্চল পবিত্র ভূমি হিসাবে পরিচিত। রামায়ণ ও মহাভারত এর মতো উল্লেখযোগ্য মহাকাব্যে এ অঞ্চলের উল্লেখ রয়েছে। মৌলভীবাজার অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বাংশের কিছু অংশ ছাড়া বাকি সবটুকুই কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল বলে ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
মুঘল আমল
মুঘল আমলে বর্তমান মৌলভীবাজার অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে এক যুদ্ধে ইটারাজ্যের রাজা সুবিদ নারায়নের মৃত্যুর পর ইটারাজ্যের সমূহ ভূমি ১৬১০ সালে পাঠান বীর খাজা ওসমানের অধিকারে আসে। ১৬১২ সালে মুঘল সেনাপতি ইসলাম খানের আক্রমনের পূর্ব পর্যন্ত ইটা রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন খাজা ওসমান।
সুলতানি আমল
বর্তমান সিলেট অঞ্চল বাংলার সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের (১৩০১-১৬২২) সময় মুসলমানদের অধিকারে আসে। আরবের ইয়েমেন থেকে আগত প্রখ্যাত দরবেশ হযরত শাহজালাল (রঃ) এর সিলেট আগমনের পর তাঁর সঙ্গী সাথীদের মধ্যে অন্যতম হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) ইসলাম প্রচারের জন্য মৌলভীবাজার অঞ্চলে আসেন। তিনি বাগদাদের অধিবাসী ছিলেন। মৌলভীবাজার শহরে তাঁর মাজার রয়েছে।
বৃটিশ আমল
১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা হারানোর পরই এদেশে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হয়। বৃটিশ সরকার ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করে এবং তালুকভিত্তিক জমিদার ও মিরাসদার শ্রেণী সৃষ্টি করে তাদের উপর এদেশের মানুষের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের ভার অর্পণ করে। জমিদার, মিরাসদাররা অবিবেচকের মতো সাধারণ প্রজার কাছ থেকে খাজনা আদায় শুরু করে। এর ফলে ইংরেজ কর্তৃক এ দেশবাসীকে শোষনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইংরেজদের শোষন ও শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে স্বাধীনতার প্রথম চেতনা প্রকাশে ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লব সংগঠনে মৌলভীবাজার অঞ্চলের সিপাহীদের অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৮৫৭ সালের ২৩শে ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের ‘লাতু’ নামক স্থানের নিকটে একদল বিদ্রোহী সেনা ইংরেজদের মুখোমুখি হয়।
নামকরণ
কথিত আছে যে, সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) এর াতুষ্পুত্র হযরত ইয়াছিন (রঃ) এর উত্তর পুরুষ মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লা মনু নদীর তীরে ১৮১০ সালে যে বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই বাজারটি কালক্রমে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ১৮৮২ সালে ১ এপ্রিল মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাজারটি কেন্দ্র করে ২৬টি পরগণা নিয়ে দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ শ্রীহট্ট বা সাউথ সিলেট নামের বদলে এ মহকুমার নাম মৌলভীবাজার রাখা হয়। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়।
কীর্তিমান ব্যাক্তিত্ব
হয়রত শাহ মোস্তফা (রঃ), মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লা, মুক্তিযুদ্ধের বীর সিপাহী হামিদুর রহমান, কবি মুজাফ্্ফর খান, সৈয়দ মুজতবা আলী, জাতীয় পরিষদ সিলেটের প্রথম মহিলা সদস্য বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, গবেষক ড. রঙ্গলাল সেন প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার ছিল ৪ নং সেক্টরের অধীনে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন সি.আর.দত্ত। রাজনগর পাঁচগাঁও এর গণহত্যা, বড়লেখা ও কুলাউড়ার বধ্যভূমিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ আজও মানুষকে কাঁদায়। ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শত্রু মুক্ত হয়।